নীলিমা দেব

 

বিসাইড দ্য মাস্ক

 নীলিমা দেব



And the birth changed its most chummy dress for ever....

জানো তো চলে যাবার পর ই তোমাকে বেশি লাইভ মনে হচ্ছে। একটা এভার গ্রিন আলো পাখি হতে হতে আকাশ হয়ে গ্যালো । ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকি রোজ আর ভাবি  মুন ওয়াকে যাবার কিসের এত তাড়া ছিল ! কবিতার মতই  স্বচ্ছ ,স্মার্ট , পোস্টমডার্ন , ইউনিক চাল চেলে দিলে শেষবারের মত...তুমি জিতে গ্যাছো হে জিতেই গ্যাছো । শুধু ভিজে যায় বোকা বোকা জল---কত জল !।।

একটা রিচ বিকেলের নোটিফিকেশান রোশনাই করেছিল  দুটি দুরত্ব্বের ভার্চুয়াল কানেকশন...মাস পাঁচেক আগের সেই খোলা জানালায় অনুখা এক আলো এসে বসেছিল বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে । খুশি খুশি আলিঙ্গন করেছিলাম অন্দরমহলে। সে আমার সৌভাগ্য । সেই থেকে সে আলো নিয়মিত স্প্রেড হত সামাজিক থেকে ব্যক্তি জীবনের আনাচে কানাচে স্বমহিমায় । কত কিছু শিখিয়েছে হাত ধরে নিস্বার্থ উদারতায় ও মহত্বে ...সে সাহিত্য হোক কিংবা ব্যক্তি অনুভবে, আবেগে,বিচারে , মননে,  রুচিতে, পরিবর্তনে ,  ফোকাসে , অভিসারে । তখন কি জানতাম সেই টান , স্রদ্ধ্বা , অনুপ্রেরণা  , জ্ঞান , অভ্যাস হতে না হতেই অনাথ হয়ে যাবে  চিরকালের জন্য । মেনে নিতে পারছিনা এই  অকাল শূন্যতা  !  তুমি যেমনি ছিলে তেমনি আছো নীলাবেশে  সগৌরবে ।

আশ্চর্য  ... প্রথম আলাপ থেকে শেষ কথা অব্ধি বলে গেলে একই ভাবে, একবার দেখা  করার জন্য । অন্তত ৫ মাসে ৫০০ বার বলেছিলে বইমেলায়  আসতে এবারই , নয়তো তুমি থাকবেনা ...আর দেখা  হবেনা  । সেদিন যখন বলছিলে ভিতর থেকে ডাক পাচ্ছ আর বেশিদিন  বাঁচবে না  ...কেন যে  সিরিয়াসলি নেই নি ,হয়ত বা শেষ কথাটুকু রাখা যেত কিংবা...!  এভাবে গল্প  হয়ে  যাবে ভাবতেও পারিনি ...  বইমেলায় আসা নিয়ে কত কি প্ল্যান, শরীর -চিন্তা...এক ফুঁ –তে নিভে গেল সব ... 

ভাবতে অবাক লাগছে যে তোমার পত্রিকায় অন্য কিছু নিয়ে লেখার কথা ছিল এই সংখ্যায় অথচ তোমাকে নিয়েই লিখতে হচ্ছে ...আমার কলমের অতো ধার নেই তবুও লিখছি...মার্জনা করে দিও । এ কয়দিনে যেটুক জেনেছি ,জানিয়েছো  তার ভিত্তিতে দু- চার লাইন লেখার সাহস জুগিয়েছি ...রোজ মর্মে  বাজে সেসব ডিসকাশন যেখান থেকে বেরিয়ে আসতো কত কবিতার সেন্স , কনসেপ্ট , দৃশ্যায়ন । কবিতা লেখার মধ্যে একটা জুনুন থাকা চাই।  লজিক্যাল,  ইলোজিক্যাল ,ইমেজারি, রিয়্যালিটি  যাই সোর্স হোক না কেন একটা দুঃখবোধ কে কালটিভ্যাট  করে শব্দায়ন তোখড় করার ইনটেল্যাকচুয়াল রুপায়ন দীপঙ্কর দত্তের লেখনীকে ইউনিক ও এক্সপেরিমেন্টাল লুক দিয়ে সমৃদ্ধ করেছে বলে আমি মনে করি। কবিতার মধ্যে শব্দায়নের জোশ ও যশ দুই ই আপলিফট  করত সমান ভাবে। থিম থেকেও বেশি  সাউন্ড  ফিলজফি  রিলেট করে উনার দামাল কলমের ফ্রিডমে । কবিতা পাঠাককে কতটা তীক্ষ্ণ , বলিষ্ঠ ,অতিমাত্রিক ভাবে ভাবাতে পারে তার ওপরেই ওই কবিতার  যথার্থ মূল্যায়ন । আপডেটেট ভার্সন  উনার কলমকে মোটিভেট করত  সেরকমই সাবলীল ভাবে । বেপরোয়া ছিল  লেখনীর গাঁথনি , বেস । কনটেম্পোরারি  আর্ট অফ মুভমেন্ট  উনার কবিতাকে এতটাই শক্তিশালী ,এডভান্স  ও নিখুঁত করেছে যে তারিফ করার শব্দ –মেধা আমার নেই। খুব সীমিত বোধশক্তি থেকে যা উচ্চারণ আমাকে ভাবায় আমি শুধু সেটুকোই হাইলাইট করার ট্রাই করেছি মাত্র। কোন গতানুগতিক বিশ্লেষণ উনার কবিতাকে ছুঁতে পারেনি ...শুরু ও শেষের উর্ধে ছিল সেসব লেখার স্পিরিট যা কিনা শুধু দীপঙ্কর দত্তের কলমেই ক্লাসিক্যাল ফ্লো পেত । লেখনীর অ্যাব্স্ট্র্যাক্ট্ গ্রোথ পোস্টমডার্ন সোচ কে এনরিচ করে গেছে বরাবরই। 

রোজকারের মত সেদিনও টি.ভি তে ক্রাইম পেট্রোল চলছিল যেটা উনি মিস করতেন না । আমিও একি প্রোগ্রাম এখানে বসে দেখতাম। তারপর থিম নিয়ে আলোচনা হত কত। সেই থেকেই উনার লেখা শেষ কবিতার জন্মঃ

প্রাকৃত

ওর দিদি থাকলে বিয়েটা তাকেই করতাম
নেই, অগত্যা অচল পয়সাগুলি একদিন ইয়ুঁ ইয়ুঁ পেঁচিয়ে খ্যানখেনে ঘুঙরু বাঁধি আর
সিরিঞ্জের অক্সিটোসিন চুমকি বাটিক শিবোরি ও টাইডাইয়ে
জুম্মা জুম্মা চার দিনে দাঁড়িয়ে যায় আমাদের খড়গাদার চন্দ্রিমা
হাস্কি রুৎবা শুঁকে দেখি ধক অ্যামোনিয়া
দুহাত উপচে কচলা তাল তাল দুই থন ভাঙলো লেচিতে
তারপর
উদ্ভিদসম্ভবা হলে নই-নভেলি গাছটির বরাদ্দের রোদ্দুর দ্বিগুন করি খোরাক
আর দাদরা-খাদরা মহীরুহকে বলি রাঁড়ি তুই মর -
এভাবেই অনাদায়ে হাওয়া যখন সশ্রম পাক খায়,
আর তিয়াসা মৃগজ্যোৎস্নার,
আমাদের ভাড়াটে দাইমা, কুচ্চুমুনা ফোকলা দাইমা,
বলেন বিলিতি কমোড নয়,
বৌ তোর আউশের খেতে পা-ফাঁক যতো কোঁথ ততো কাঁথায় পাঁজাকোলা আলো
ছাতিমের নাতিন হলে সুয্যিটিও ক্রোশ ক্রোশ শলাকা গুটিয়ে কেন্নো নিভে আসে —


থিম টা আমার জানা বলেই কবিতার ভিতরে ঢুকে প্রতিটা নির্মাণ কে ফিল করতে পেরেছি কাছ থেকে... রিয়েল কাহানি থেকে নেওয়া কনসেপ্ট টা নিয়ে উনি আমাকে লিখতে বলেছিলেন প্রথমে কিন্তু আমি উনাকেই লিখতে বলি ...এমন নির্মাণ উনার কলমেই তেজ দৌড়ায় সঠিক লক্ষ্যে ...

দিল্লির গরীব পরিবারের আট বছরের মেয়ে আশা। তাকে তুলে নিয়ে যায় একটা গ্যাং। ইঞ্জেকশন দিয়ে দিয়ে ১৪ বছরের মেয়ে বানানো হয় তিন মাসে। ধীরে ধীরে মেয়েটির স্তন বাড়ে, মাসিক স্রাবে সালোয়ার ভিজে যায় - পুলিশ নানান ইনভেস্টিগেশন ও রেইডের পর মেয়েটিকে উদ্ধার যখন করে তখন সে নিজেই ঠোঁটে মুখে রং মেখে, শৃঙ্গার করে এক শেখের সঙ্গে স্বেচ্ছায় শোয়ার জন্য তৈরী হয়ে গেছে।
এটাকে মাথায় রেখেই লেখা... এমন ব্রেভো লেখা কেবল উনিই লিখতে পারেন ।  কোয়ালিটি লেখাই উনার উদ্দেশ্য ছিল... বলতেন ৬ মাসে একটা করে লেখব ,তাতে কি ! এক্সপেরিমেন্টাল ইনপুট ইমপ্লিমেন্ট করে কবিতার স্রোত কে অনেক দূর অব্ধি স্রেংদেনিং করত উনার সেন্স অফ ওয়ার্ডিং ।  প্রতিটি শব্দের  নাভি থেকে  উচ্চারিত হত সুর,তাল,লয় ও মাত্রা এবং লেখনীকে অন্য মাত্রা দিত। আক্ষরিক অর্থেই উনি তোখর শব্দচাষা ছিলেন । লেখনী পড়েই বলে দেওয়া যায় যে এ দীপঙ্কর দত্তের ই লেখা।  থট প্রসেস এতটাই প্যাশনেট, ডাইন্যামিক ও ব্রিলিয়ান্ট   ছিল যে যেকোন টপিক মেধাকে আপলিফট করতো  নিজস্ব  ভেলোসিটিতে । যেমন ব্যতিক্রমী ছিল  কলমের আদা  তেমনি ব্যতিক্রমী  অভিযোজন ।

মিস করা ছাড়া আর কিছু রইল না ।প্রাত্যহিক জীবনের একটা এপিসোড কোমায় চলে গেল... এ গ্যাপ কিছুতেই ফিল হবার নয়। উনার ভাল লাগা কত ইন্সপিরেশন্যাল লেখা শেয়ার ও রিভিউ করতেন রোজ । কত নতুন দরজা খুলে যেত অজান্তেই। শুধু লেখালিখি কেন , দীপঙ্কর দত্তের একটা হিডেন ট্যালেন্টও ছিল । উনি ইউনিক সেফও ছিলেন। একা থাকতেন বলে নিজেকেই রান্না করতে হত আর সেই সুবাদে অনেক এক্সপেরিমেন্টও করতেন । অবাক হতাম  একজন  পুরুষ  মানুষ কি করে ওত খুঁটি নাটি রান্না জানত। রাঁধতে রাঁধতেও অনেক লেখা লিখতেন ।আমি রান্না ভালবাসি বলে কত যে  ইউনিক রেসিপি রোজ শেয়ার করতেন বিভিন্ন জায়গার । উনার মায়ের হাতের সেরা কিছু রান্না শিখিয়ে গেছেন যেগুলো আমার এক্সট্রা পাওনা ছিল ।  

আপসোস ... আর কোন ‘অসীম পুৎটুন্ড’ ‘লোকনাথ ডাব্বাওয়ালা’ থেকে কল করে খাবারের অর্ডার নেয়না !!  চুরেল,মাঙ্গলিক বলে কেউ আর পিছনেও পরেনা ...  লিখা কমপ্লিট করার জন্য, অনুবাদ করার জন্যও কেউ কাব্য করে বকেনা । হতে হতে অধুরা রয়ে গেলো “মালিনী”...জানা গ্যালো না লং শীতে কেমন লেগেচিল বসন্তের রঙ ... হোনা থা জো কুছ নিরালি ,কুছ আলগ  !

           I can hear the babble
           between the dust and dark
           left behind the spirit still more alive
           just a start of unfeed realise
           I adore  for ever..... 
            

No comments:

Post a Comment

Facebook Comments