শৌভ চট্টোপাধ্যায়

 

নিঃশব্দে অতিক্রম করি

শৌভ চট্টোপাধ্যায়



১.

চোখ তত অন্ধ নয়
আলো তাকে অন্ধ ক’রে রাখে!
হঠাৎ নদীর জলে
ভেসে আসে আধখাওয়া লাশ
ভীষণ স্বপ্নের মধ্যে
হা-হা ক’রে হেসে ওঠে কেউ

কোথায় এসেছি আমি, কোনপথে,
মুনিয়া ও রুবাইকে নিয়ে?
কোনদিকে যেতে হবে, সে-কথা আলাদা

২.

রৌদ্রে আচ্ছন্ন দিন—
আমি দেখি, আলোর শিকল
পথরোধ ক’রে আছে!
এ-শহরে পাখিদের ডাক
ক্রমশ কর্কশ হয়, তামাটে ধুলোয়
ঢেকে যায় রাস্তাঘাট, বাড়িঘর, লেখার টেবিল

কখনও, অনেক রাতে, জ্বলে ওঠে
অচেনা বাড়ির আলো, রাস্তার ওপাশে
বিপুল নক্ষত্রগুলি ধীরে ধীরে পুড়ে গেলে,
জন্ম নেয় অন্ধকার,
                ভারি ছায়া—নির্বাক, গৃহাভিমুখী

৩.

হয়ত এবারও শীত ক্ষণস্থায়ী হবে,
মরশুমি ফুলগুলি ফোটার আগেই
ঝরে যাবে বারান্দায়। সারারাত রুবাইকে ছুঁয়ে
শুয়ে থাকি। দেখি, স্বপ্নের ভেতরে জল
লাফিয়ে উঠেছে—দেয়ালে নুনের দাগ

একদিন, আমাদের হাত থেকে পড়ে গিয়ে
ভেঙে যায় কাচের বাসন। বিষুবসূর্যের নিচে
আমরা তো ততদূর হাঁটিনি কখনও!

তবুও সমুদ্র দেখে, অহেতুক অভিমান করি

৪.

মাঝেমধ্যে ভাবি, হয়ত তোমারও কিছু
বলার রয়েছে। হয়ত এই নীরবতাই এক
দীর্ঘতম যোগাযোগ, সারাদিন
ভুলপথে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে
এখন পায়ের কাছে লুটিয়ে পড়েছে
ঘুমের অপরপ্রান্তে ফুটে আছে
রাত্রিজাগা মানুষের চোখ,
অপেক্ষার অন্যদিকে নিরিবিলি বাড়িটির ছায়া

সকল চিহ্নের ঊর্ধ্বে খালি এক ঝুঁকে থাকা
আকাশ, নক্ষত্র, শিশু, অতিকায় পাথর রয়েছে

৫.

হয়ত, দৃশ্যের এই আলোছায়াটুকুর ভেতরে
রয়ে গিয়েছিল কোন অস্পষ্ট যোগাযোগের আদল। অথবা,
আরো একটু অন্ধকার হ’লে, দেখা যেত,
গাছের পাতার ফাঁকে দুটো-একটা মৃতপ্রায় তারা—
            অচেনা পথের চেয়ে আরো দীর্ঘ অপেক্ষার কাল

ভাবি, একদিন আমিও জানতুম, কীভাবে নকল
করতে হয় পাখিদের ডাক, ঝড়ের আওয়াজ কিংবা
ট্রেনের হুইসল। অথচ এখন, ব্যাকুল সন্ধ্যার মুখে
নড়ে উঠছে পাথরের জিভ, দু-এক মুহূর্ত মাত্র

No comments:

Post a Comment

Facebook Comments