পায়েলী ধর



দু'মলাটের রাখাল মানুষ

পায়েলী ধর

 

১/ "এলো যখন সাড়াটি নাই..." (১৩/৭/২০১৩)


জন্মছক রাহু কবলিত।ওদিকে ঝলসানো সূর্য প্রেমিক সেজে চুমু রেখেছে শুক্রের নাভিতে।অর্থাৎ যোটকের ঘোরঘুট্টি বলে দিচ্ছে প্রেম স্রেফ এক ডিগ্রিতে দাঁড়িয়ে নীচস্থ।মস্তিষ্ক থেকে, হৃদযন্ত্র থেকে, উষ্ণতা থেকে, উপশম থেকে ঢালু হয়ে সমস্ত "কিপ ইন টাচ" বেঁকে যাচ্ছে হা-মুখো শনির কবলে।
বৃহস্পতি ফরিস্তা আমার। বুকে একটা পদ্ম এঁকেছে সে। তার পাঁপড়ি জুড়ে অজস্র ছ্যাঁদা। ওসব বিগলিত রন্ধ্রে ভরা আছে মাঙ্গলিক কাঁটা আর কিছু উপোস। এমতাবস্থায়, আমার বিডসময় খোঁপায় আটকা পড়লো ভিনদেশী এক রাখাল মানুষ।উপমায় আমাকে তার ভেনাস মনে হয়। সাতজন্ম সাঁতরে আমার উঠোনে এসে ঘাঁই মারছে তার গোপন জবানবন্দি। অদেয় সবটুকু বাৎসল্যে রাখলে, ওর ঝুলিতে তুলে দেওয়া যেত একটা নির্ভার শৈশব।স্তন্য সেখানে উপাদেয় নয় বরং আশ্রয়। জড়িয়ে নিতে নিতে যেভাবে সম্পৃক্ত হয়ে উঠছে গলার স্বর, নেশার ঘোর, কান্নার অভ্যেস,চটুল রসিকতা; তার অধিকতর দূরত্বে জেগে থাকছে একটা রাজপথ আর একটা মফস্বলের সিংহদুয়ার...

২/ " সন্দেহে ভরা হোক..." ( ১২/০৪/২০১৪)


সকালের নিফটির বাড়বাড়ন্ত খুঁটে দেখেছে রাখাল।গ্লুকোজবিনা চা-কাপে ক্রিমকেকার গুলে নিয়ে খবর নিয়েছে তিনধারিয়ার চোরামেঘের। শখের টয়ট্রেনের ওপর ওর বাসর বাঁধার সাধ। ওতেই তুলে দেওয়া যাক শেয়ার বাজার, ডায়েট চার্ট,মূল্যবৃদ্ধি, আকাশকুসুম এবং আমাকে। আদপে এই হল গাঁটছড়া। রান্নাবাটি,আলু- মুলো সব নিয়ে গুছিয়ে বলা হাজারো কৈফিয়ত।
অথচ  সন্দেহ জুড়ে জুড়ে রাখাল লিখেছে একশো আটটা প্রতারণার কবিতা।
তাতে আমি রাই কিশোরী। প্রোটাগোনিস্ট।
হোটেলের ঝুলন্ত দার্জিলিং শীতে নাকি ওম চেয়েছিল আমার কাছে। আর কথামাফিক আমিও পসারিণী সাজি অভণিতায়। ওদিকে শিলিগুড়ির সমস্ত ধূসর ব্যালকনিতে লুকিয়ে আছে এক একটা সুযোগবাদী প্রবাসী থাবা। তার ভেতর সেঁধিয়ে গেলেই আমার মাথায় উঠবে হীরের মুকুট।
যদিও রাখাল জানে, আঁচলের খুঁটে যেটুকু সঞ্চয় সবটাই তার হাওয়ায় ভাসাই রোজ। আঁচল খুলে সেসব উড়তে থাকে রাজধানীর কোনও অজ্ঞাত দু'কামরার ঘরে। ওখানে রোজ ভোরে আমার শুচিস্নান, ঘরদুয়ার, অভিমান,অভিনয় জ্যোতিষতত্ত্বে আটকে আছে। সবটাই কাল্পনিক...
আমি আর রাখাল বিনা......

৩/ "তোকে ছোঁব সাধ্য কই...." (২৩/০২/২০১৫)


বসন্তের জাগলারি জানে রাখাল। ওর হাত ভর্তি নিষিদ্ধ ফল। কিন্তু কামড় দিচ্ছে কই?
অপত্য স্নেহরস উপচে পড়ছে ছলাৎছলাৎ।  মধুমেহ বড় জটিল জট। শেকড়ের পর শেকড় গেঁড়ে ফেলেছে ওর অনুপুঙখে। আমাকে তাই তফাৎ মাপার পরামর্শ দিল রাখাল।
আর ফটোশপ থেকে তুলে এনে মুখবন্ধে রেখে গেল জন্মদিনের পায়েস। পরমায়ু পেতে প্রদীপ এবং পরমান্নে লিখলাম- "তোমায় নতুন করে পাব বলে হারাই ক্ষণে ক্ষণ..."
ইথার তরঙ্গের ওপারে হাপুস কাঁদছে রাখাল। বলছে - "পরজন্ম তোকে দিলাম। চোখের ভিড়ে হারিয়ে যাওয়ার অব্যবহিত আগে একবার অন্তত গরদের সাথে লাল টিপ গুলে ভোর হয়ে দাঁড়া মেয়ে। সম্প্রদানে আমি তোর বাহক হব। প্রতিকার গুছিয়ে দিয়ে তোর কোমর গোছায় ঝুলিয়ে দেবো কোনও দিব্যদেহী পুরুষ। সোহাগে- ব্যথায়- স্বস্তিতে তোর নারীজন্ম হোক। গর্ভজাতের নাদুস দেহ নাড়ি ভেঙে পার্থিব প্রথম বিচ্ছেদ চিনুক তোর কোলে।আয়,আদরের উপশম দিই তোকে। তোর নামেই তোলা থাক শেষ আগুনের দাবীদাওয়া।....."

এসবই অতর্কিত বড়।আমি শুধু খোলা চোখে দেখতে পারছি, ঘর ছাড়ছে রাখাল।ওর প্রস্থান পরবর্তী পথগুলোতে একটা শব্দ কেমন আর্তের মতো চীৎকার ছুঁড়ছে
মা... মা... মা...

৪/ "নিজের মুখের রয় না আদল..." ( ৯/০৬/২০১৬)


সমর্পণের ভাষা নেই কোনও। সবটাই মর্জিমাফিক বুঝে ফেলা।
বিচ্ছেদকে গুণিতক আকারে মেনে নিলে সিলিং এবং বিছানার মধ্যবর্তী উচ্চতা তেমন কিছু শোকবাহক নয়। হাজারগণ্ডা সম্পর্ক দাহ করে রাখাল বীতশোক হল। আমি ওকে খাঁচার প্রলোভন দিইনি কোনোদিন।  বরং অসীমতত্ত্ব বুনে ফেলেছি মাথার ভাজে। বন্ধু ছলনায়কেরা ওকে মাতাল বলে জানে। গলা ধাক্কা খেয়ে বেসামাল পথ ঘরে আসে। ক্লান্ত রাত সিঁড়ি ভাঙা অংকের মতো গড়মিল হলে; অন্তর্বাসহীন ঘুমিয়ে পড়ে ভাব- ভালোবাসা- অভিশাপ। বালিশের আড় কাতে বীর্য ঢেলে তখন পাপ- পুণ্যের হিসেব কষা নিষেধ।
আমি ওর মাথায় হাত রাখলাম, তারপর বুকে,তারপর সমস্ত বেঁচে থাকায়। ওমনি কিছু রঙচটা প্রলাপ ছড়ালো বাতাসে। কনাটপ্লেসের পাঞ্জাবি রেস্তোরা মুখরিত  অসম প্রেমচর্চায়। দেখি, আস্তিনের ভাজ খুলে বিষধর কিছু জীব ক্লিভেজের ব্যাসার্ধ মাপে অনুমানে। বুঝতে চায় বৈধতার আসল গড়ন।
আমরা উপহাসে ধুলো করি সব প্রবাদ। কীপ্যাড ঠুকে স্বীকারোক্তি রাখি নাপাক  মোহাব্বতের। ভদকায় ভিজে নেয়ে,ঢুলো চোখের রাখাল কেমন বাদশাহ সাজে।বইবাজারের ঘটিতে তখন টগবগ ফুটছে আমাদের ভার্চুয়াল পৃথিবীর তস্যভাজ।
আসলে আমরাই হয়তো ফুল ফোটানোর ভুল স্বপ্ন গেঁথেছি  রক্তবীজের ঝাড়ে.....

৫/ " তরী আমার হঠাৎ ডুবে যায়..." (০৯/০১/২০১৭)


নদীমাত্রায় যোণিদ্বয় আদ্য বলেই ফ্যালোপিনের গহ্বরে দৃষ্টি রাখছে শনি। রাহু-কেতু- শুক্র মিলে একটা বিচ্ছেদ নিশ্চিত প্রায়।রাখালের এহেন স্তুতি শুনি। আজন্ম বাচাল।  মৃত্যুকে চুমু খাওয়ার আগে একবার ভাবসমাধি চায় আমার ভেতর। নাতিদীর্ঘ শ্বাস কোনও স্লেজে কি ওকে তুলে দেবে অজ্ঞাত হিমঘরের যাত্রায়? অশনি বুকে রেখে একটা প্রেমের কবিতা দিই ওকে। সাথে সরবিট্রেট। রাখাল আজ ঘুড়ির সমার্থক।  সুতোতে ঝুলে আছে আমাদের একজোড়া কড়ে আঙুল। কোল দিলাম ওকে।স্পর্শও।ওমনি ঘুমপাড়ানি গান এলো কাঁচের ঘর জুড়ে।
শেষতম চুমুটা মুখরোচক  হওয়ার আগেই দেখি,  আমার বুকের ওপর উঠে এসেছে আস্ত একটা মর্গ। তার প্রতিটা প্লেটে হাসি বিছিয়ে ঘুমন্ত সওদাগর। কারা সব অশুচের খই ছুঁড়ছে আমার দিকে। সঙ্গে তেরো দিনের পার্বণীর ফতোয়া । অমীমাংসিত  গল্পের শেষে লেখা হল, আগুনই আসল ঘুমের দাওয়াই।আমি তার আঁচটুকু ঢেকে ফেলেছি স্মৃতিতে। যোটক জানে কিভাবে অন্তরঙ্গ হতে হতে অন্তর্গত হয়ে আছে 'ছোট ছোট শ্বাস'- স্থবিরতা - রাখাল - আমি - এবং পরজন্ম......



No comments:

Post a Comment

Facebook Comments