অনিন্দ্য সান্যাল

 

আপৎকালের দুরন্ত হেমরেজ

অনিন্দ্য সান্যাল



দীপঙ্কর দত্তকে নিয়ে কিন্তু একটা কথাও বলা হয়ে উঠল না

 

অ্যাম সরি    জানি একটু বাড়াবাড়ি হচ্ছে, কিন্তু স্যার, উস্কানিটা আমি এভাবেই দেই এবং দেবো / কারণ আঘাত বলতে বুঝি Death blow, Coup de grace. ( আগ্নেয় বসন্তের জাগলার )

সুতরাং একটু বাড়াবাড়ি না হলে কি আর চলে স্যার ! বাড়াবাড়িটা হোক, কিন্তু তাহাতে উস্কানিটাও যেন জবরদস্ত থাকে, যে পিলে চূড়ান্তের অবগাহন পায়নি তার সে আঘাত না সয়, সে-ও ভি কবুল, সন্তরণশীল যে মাইক্রোস্কোপিক চঞ্চলতা তা যেন অযুত লক্ষ নিযুত কোটিতে শুধুমাত্র হ্যা হ্যা উল্লাসে চড়াই পাখির ডিম না হয়ে যায়, কিছু তো বার্তা ছড়াক, কিছু তো কাঁইকিচিরে ভৈঁরো দিকচক্রবালে এক ফোঁটা সিন্দূর হয়ে গলে যাক। তথাপি নেক্রোফিলিক রাহাজানি থেকে যে সকল কীট টুকি দেয়, মাছরাঙা আহ্বান করে, সুন্দর এসে হোগা খুলে দেয়, তথায় কবিজন্মের উপবীত কস্টিকমার্জ্জনায় ক্রমশ আলো হয়ে ওঠে।  

সুতরাং প্রাচীরের পর প্রাচীরের মতন শব্দ দাঁড়িয়ে গেলে, বসন্তের এলো বাতাসের পাগলামি প্রতিহত হলে, বিদ্যুতের খোলা তার, দোটানের মহিমায় স্পেস্‌ ম্যানেজমেন্ট, হঠাৎ আবিষ্কারের মতন মস্তিষ্কের চোরাগোপ্তা গলিও যখন দুপাশের ঘরবাড়ি সরিয়ে দিতে থাকে, তখনই আলতো কেৎরে পাশ ফিরে পা দুমড়ে হাত সোজা, এবার চূড়ান্ত কয়েকটি পাক খেতে খেতে ক্যারিশমা তোমার, তখনই পাতাখসা দিনান্তের শব্দ লোফালুফি, তাজ কী বাহার ! চা ছাঁকার ব্যাকগ্রাউন্ডে তামসিক জাগলারি, এতাবৎ অজানা এভিনিউ শব্দকুহকে গা গতর চাগায়, ক্যাসিনোর ঘুরন্ত চাকী সহসা থমকে দাঁড়ায় ভূতুড়ে স্টেশনে, কিছু কিঞ্চিৎ এবং এহ যথার্থ যে এক ঝটকায় পাঠকের জেনোসাইড অসম্ভব, কতদূর কাম্য তা পুঁথিকুশলদের জুরিসডিকশনের বাইরে অর্বাচীন তর্কে বিভোর, কারণ ব্যাখাতীত অথবা অশালীন, গবর্মেন্টের অর্তে রিসাচ নামক গুয়ের চন্দনতিলক না, করখেদানো ছাত্র ঠ্যাঙানোর নতুন আই টেন-এ শ্বশুরবাড়ির চল্লিশ সাইজ ব্রা নয়, ধুত্তেরি, এই সকল নান্দনিকতা যদি বসন্তে মানাত তাইলে তো ছোট এই ফল কাটার ছুরির কোনও ভ্যালুই থাকত না মশায়। 

রৌদ্রের এককোষী বাঁজা প্রহরগুলি আজ রাতে মা হয়  (সেডিমেন্টারি নাইটমেয়ার, দীপঙ্কর দত্তর কবিতা)

আমি কি ইনোসেন্ট ফিনোসেন্টের কথা বলেছিলাম ? না কি আপনি ওটা ওভারলুক করে গেছেন, তার মানে এই নয় আবার আমি মলাটের আবেদন থেকে খিড়কী দু’পাল্লা খুলে বসন্তের বাতাস শোঁকাবো। যে সকল শব্দপ্রত্যয়ে কাব্যগুল্মে জলদানের বায়বীয় দ্যুতি জন্মে তা থেকে দু’কদম দূরে থাকলে কোনও আন্ডারপ্যান্টও অশুচি হবে না। তা হলে বাঁজা যে সময় তা থেকে দু’টো চারটে প্রাণপিণ্ডের জন্ম যদি সুবর্নরেখার বালুকণায় সন্ধানের উপযুক্ত পুরষ্কার হয়েই থাকে, বাদাবনে কোথাও কি বলবেন না, একটা ডাঁটো গাছের ডগা কিছুমাত্র হিলেছে ? এমন কী মৃত শিশুও যেখানে, ইয়েস, দুধ টানছে !     

সারপ্লাস / আগুন নিয়ে লড় লড়ে যা হারামী   চাদ্দিকে জবজবে আলগা পাথর যদ্দিন না
থ্যাঁৎলাস কোঁথ দে  ইয়েস ডক্টর ইৎস আ কেস অব সীভিয়ার অ্যান্টেপারটাম 
হেমরেজ ডিউ টু প্ল্যাসেন্টা প্রীভিয়া ছ ঘন্টার ব্লাড ট্রান্সফিউশন আর ড্রিপ অক্সিটোসিন
মৃত বাচ্চাটির ওজন প্রায় ছয় পাউন্ড  ইয়েস, দুধ টানছে - ( সেডিমেন্টারি নাইটমেয়ার )


বন্ধ্যা সময়ের অনুতাপ যে দগ্ধ করে এবং যে প্রচণ্ড ক্যাঁৎ শব্দ মেসেঞ্জারের টুং শব্দের মতন বেজে ওঠে, আতপসিদ্ধ চাউলের ঘ্রাণে উড়ে আসা ডানার প্রজ্ঞায় গেঁড়ে বসে আছিল যে বাজারি প্রজন্ম তার সেলফি এবং হাত মারার নানারূপ ব্যঞ্জনা ওই খানিক আগেই যে শব্দের ব্রহ্মাণ্ড তোলপাড় তারই চিত্র এবার দেখা যাক।  

ঘটনাটা এই যে আমি
যতবার বোঝাতে চেয়েছি যে আপৎকালে
ওসব মায়া-ফায়া দ্বিধা ঢ্যামনামো
ছেড়ে দিয়ে যা ভাঙার তা দ্রুত ভেঙে ফেলতে হয় ( ব্রেক টু গেন অ্যাকসেস )


কী ভাঙবে ! হাত উলটে এই রকমই শুধানোর রেওয়াজ রপ্ত হওয়ার জন্যই তো অজন্তা ইলোরা, আলতামিরা।  পিল পিল করে মানুষ গঙ্গাস্নানে যাচ্ছে, কচুরি মচুরি খাচ্ছে, রেললাইনের ধারে আজও পর্যাপ্ত হোগা, তদুপরি পলিটিক্স মারাচ্ছে, আর রটন্তিবাড়ির অন্নভোগে চূড়ান্ত রসের গদগদানি, আঠা দু আঙুলে টিপে ধরলে বাঙলা সাহিত্যের সমস্ত বাজারের একটা ধারণা পাওয়া যায়। কত চুপি চুপি পাখি ডানা গোটায়। ধু ধু প্রান্তরে রৌদ্রের আলো রিফ্লেক্ট করার কসরত কাহাকে দেখাতে চেয়েছ কবি, ও সব মায়া ফায়া কি তোমাকে মানায় ? অথচ দ্বিধার কথা উঠলে আমি তো বলব এ কী বৈষ্ণবপনা, এ কথা সর্বজনবিদিত যে কলম তোমার নাগাল পেতে অস্থির হয়ে উঠত বলে অন্তত বাংলাবাজার মানে আমরা শেয়ালদার কোলে মার্কেট বুঝি।
আপৎকালের এইরূপ এমার্জেন্সি সময়ে সহসা গুপ্ত প্রকোষ্ঠ থেকে সার্জিকাল স্ট্রাইক অতএব অবশ্যম্ভাবী ছিলই।     

দাঁড়াও সমাদ্দার, খালি চোখে ল্যাসারেশনসগুলো পষ্ট হয় না। স্পেকুলাম ঢোকানোর
আগে ভালভার পস্টেরীয়ার মার্জিন আর পেরিনিয়ামে টলিউআইডিন ব্লু-র
অ্যাকোয়েয়াস সলিউশন একটু তুলোয় করে লাগাও, খানিকক্ষণ শুকোতে দাও
তারপর অ্যাসেটিক অ্যাসিড স্প্রে করো, দেখবে লিনীয়ার এরিয়াগুলো রয়াল ব্লু দাগ
ধরছে, মানে পজিটিভ, তখন স্ন্যাপ নিও। ( কাঁঠালপাতা, ব্রেইলবর্ণ বিষহরি, শহর পাব্লিকেশন্স)


কাম অন, হে সকল জলঢোঁড়া, এক্ষণে বসন্তে বসন্তে একটা শারীরবৃত্তীয় পাম্প নিয়ে হোলির রং বরষে ভরে চেপে চুপে ফুলিয়ে নিরোধ নিরোধ খেলার সময় অনেক আগেই হেজিয়ে গিয়েছিল, খবরের কাগজে বারংবার চোখ বোলান, কান খোলা রাখুন, শীৎকারের শব্দ কোমল ত্বকে মেখে নিতে নিতে অনেক কুসুমশয্যা তো রচিত হয়েচে, যোনিচোঁয়া রক্ত যে সদাই বিজ্ঞাপন নয়, তা যে কাঁঠালপাতায় মুছে নেওয়া আগুনের প্রাককথন এবং হ্যাঁ আরও একটা লাস্ট ব্লো এটা বুঝে নেওয়া দরকার। সম্মেলনের নামে সভা সমিতির নামে পমেটম মচমচে বাহন ভটভটিয়ে যেথা যাচ্ছো সেথায় ক্ষুন্নিবৃত্তির পর পেঁচার চোখ বুঁজে এলে চাঁদ ওঠে । 

FORTUNER MH 9C Y 2323
ক্ষুন্নিবৃত্তির পর পেঁচার চোখ বুঁজে এলে চাঁদ ওঠে
জ্যোৎস্নায় জিগর টুকরার অটপসির পর সূঁচের কারু ফোঁড়াই
ফল্‌স সিলছে ঝিঁঝিদের মিমিক্রি দিঘীপাড়
একটি শরীরী প্রেম যায় আরেকটি আসে মাঝখানে আমরা যে
সাইবার গন্ধর্ব বিয়েটা করি আর কিল্লি বরাদ্দের অনলাইন ছা-পো হয়,
মন্টেসরি থেকে গার্জিয়ান কল এলে আমি বলি তুমি যাও, ও বলে রান্ডোয়া তুই যা,
তুই না বাপ, ডরপোক ! (বাহনুবাচ)


কথাটা হল স্বল্প সময়ে খানিক অজ্ঞাতবাসের ব্যবধানে সাপলুডোর বক্র উচ্চমার্গগামীতা, কতিপয় পতনমুহূর্ত পতনের আবেগমাত্রের পথবন্ধুরতা, মর্গ থেকে পিঁপড়ের সারি মৃত জড়জৈব উর্বর গর্ভক্ষেত্রে জাল ছোঁড়ার বিভঙ্গে বিক্ষিপ্ত তথাপি চাঁদমারিবিদারক চিত্রকল্প প্রক্ষেপণ, এই সমস্ত, বীজবপনের হাল হকিকতকেই কখনও বোধহয় আড়ালে ঠেলে দেয়। আঁখো দেখা হালে তন্বী কলম যে প্রকৃতপক্ষে আণ্ডীর এবং পঞ্চতন্মাত্র আমাদেরই জল বায়ু এবং খাদ্যাভ্যাসের কম্বলে উত্তরাত্তীকৃত প্রজন্মে নিষেকের অভিলাষে অথচ নির্লিপ্ত দার্ঢ্যে ওঃ ওত পেতে বসে থাকবেই, উপরন্তু সন্ধানের দায়িত্বে পরম উদাসীন, হ্যাঁ সন্দেহ একটা থেকেই যায় যে কতটা সময় খরচ খরচা এখনও বাকী থেকে গেল।    

সেহেতু সাক্ষাতে বিলম্ব অবধারিত, কিন্তু যখন সাক্ষাৎ তখন মুখোমুখি সংঘাত বই অন্য কিছু না, সম্ভবত, কারণটা মোটা দাগে গদ্যকারের অভিসন্ধিতে কইতেও বাধো বাধো, কিন্তু এটুকু অকপটে যে উস্কানিটা আছে এবং তা অমূলক নয়।

No comments:

Post a Comment

Facebook Comments