পীযূষকান্তি বিশ্বাস

 

সারেআম

পীযূষকান্তি বিশ্বাস


সামান্য, অতি সামান্য পদক্ষেপ ।  ডানা নাই । ডানার গন্ধ নাই । মুছে ফেলে চিলের উড়ে যাওয়া নাই । আছে এক স্কেল । মাপতে গিয়ে দেখি সেই দূরত্ব নাই । উদ্যত পা নিয়ে রুদ্ধ দেহলিজ ।  দিল্লির এই রুক্ষ আরাবল্লীতে স্তুপ হয়ে আছে পাহাড় । কুড়ি হয়ে ওঠা পাঞ্জাবী তন্নী আর মুঘলদের জ্বলে ওঠা তান্দুরীতে রাজধানী পুড়ে যায় । আকাশে সালফার, শীশা ,পলুউশনকে মিডল ফিঙ্গার দেখিয়ে রাত বাড়ছে । রাত জেগে এক আসন্ন বুঢ়াপা পেঁচিয়ে উটছে কোমর বেয়ে । সর্পদর্শনে রজ্জু হতে পারে কি ?  নাকি রজ্জু সর্পের থেকেও প্রাণঘাতী হতে পারে ? কানার না আছে ঘাট, না আছে ধোবী । ব্রেইল বর্ণে পড়ে যাই মনষামঙ্গল । 

টিকিট তো কাটাই আছে । রিটার্ন টিকিট কেটেই জার্নি । শেষ মেট্রোটা বুঝি এই চলে গেলো । কপালে হাত দিতেই টের পেলাম শ্বাস ভারী হয়ে আসছে । একা, মাইল কে মাইল এই একাকী জীবন , ছোট ছোট শ্বাস শেষ করে দিলো শেষ প্রাণ বায়ু শেষ হয়ে গেলো আখেরী রাস্তা । ইসকে বিচ কবি দীপংকর দত্ত আর নিঃশ্বাস নেবেন না ।

শো-মাস্ট-গো-অন । সানিধাপা । মিফো দের ডোরবেলে একটি ছেলে এসে পিং পাং ঘন্টা বাজিয়ে দিয়ে গেলো । হুররররর রা , জাহাজ আসছে । পোতাশ্রয়ের শ্রী-বিশ্রী এক ঘিনে ঘিনে পাতলি গলিতে দীপঙ্কর দত্ত দেখছিলো গায়ে জ্বর নিয়ে খদ্দের ধরা । মেরী মাম্মী ।  মা মারা যাবার পর তাই যেন অভিমানে যমুনায় ভাসিয়ে দিয়েছিলেন তার সমস্ত কবিতার খাতা । তারপর দীপঙ্কর দত্ত বহুদিন কবিতা লেখেন নি । তারপর কোন এক উষ্ণ জুন কিংবা জুলাই হবে, শূন্য মস্তকে আছড়ে পড়ছে সহ সাড়ে পয়তাল্লিশ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড, করাল রাজধানী তখন বিষ ঝরাচ্ছে । দিল্লির হাটের নিমগাছের নীচে বসে বিজলী গ্রীলস তাকে নিম আন্দোলনের কথা শুনিয়েছিলো । ব্রীহস্পতি যখন উচ্চে, শনি ডাউনে, মঙ্গল বিচ-বরাবর,  জিরো আওয়ারের গ্লাস ভেঙে বেরিয়ে ছলকে উঠেছিলো শূণ্যকাল ।

অনেক কাঁদানে বইমেলার সংগে সংগে অনেক অমাবস্যা পার হয়ে গেলো । হাড়কাটা গলিতে অনেক রাত ভোর হয়ে এলো । এখন এই বাঁশীটাই সমস্যা ।   এই বাঁশী দিয়ে যাবো কাহার হাতে । ভোর চারটে থেকে ছোট ছোট শ্বাস । হোমিওপ্যাথি ও হোম রিমেডির খোঁজে ভার্চুইয়ালিটি ।  অনেকদিন প্রেসারের ওসুদ খাওয়া হয়নি । বাঁশীটি বাজছিলো । মাঝে মাঝে । থেমে থেমে । বাঁশীটির দমে দমে বলছিলো ডোরেমিফো । শূন্যঘরের দেওয়াল থেকে ঠিকরে আসছিলো সোলাটিডো । স্থানদিল্লির আউটস্কার্টে গাজিয়াবাদ ডেভেলপমেন্টের এই ফ্লাটে । হাতের কাছে একটা বেসিক ফোন, ভাঙা ল্যাপটক । অন্তরার সুর বেমান লাগছিলো । ঠিক হলো , সর্বিট্রেট ও দেশী টোটকা যখন গায়ের ঘাম শোকাতে ব্যর্থ, তখন ঠিক হলো,  ডাক্তার বসবে বেলা দশটায় ।  রাত পোহালো ।

টুং টাং । এতো বাঁশির আওয়াজ নয় । মোবাইলের রিং টোন হবে । ফেসবুকের মেসেজগুলো একটা সিরিজে আসছে । ভাইরাসে মত রিপ্লিকেট হচ্ছে মেসেজগুলো । ইনবক্স থেকে ইনবক্স ঘুরছে তারা । সংগে রিং টোন গুলোও এক শহর থেকে অন্য শহর । এক বুক ঘেমে নেয়ে  পঞ্চাশোর্ধ কবি একতলা থেকে যখন নীচে নামলেন, বাঁশী থেকে হাওয়া উধাও । পা লড়খড়িয়ে পড়লো । কোন কবিরাজ দেখতেই পেলো না যে ছোট ছোট শ্বাস তাকে শেষ করে দিলো ।

মা নেই, পা নেই, ধানি সা নেই, এই বাঁশীতে হাওয়া দেওয়া বাস-কি বাত নেহি দোস্ত, এই মনিহার আমায় নাহি সাজে । শুধু ছেঁড়া যাচ্ছে না । গলায় আঁটকে আছে কিছু সামান্য কথা, অতি সামান্য । বাংলার মূলভূখন্ড থেকে বহু দূরে, এই ডায়াস্পোরিক আজব দুনিয়া । আজব তার ভাষা চরিত্র, খানা-পিনা, তার বাতচিৎ অতি সামান্য । আওয়াজ ক্ষীন হয়ে আসে ।লোধী কলোনীর দিক থেকে  আই এন এ মার্কেট দিয়ে একটা এম্বুলেন্স এই মাত্র দৌড়ে গেলো অল ইন্ডিয়া মেডিকেল কলেজের দিকে । রাস্তা জুড়ে সাইরেন ।  বন্দিশে লেগেছে চাটি, আপনার কি শুনতে চান পোস্টমর্টেমের কাঁটাছেড়া এই ভীমপলাশীর ধা ?

ধন্যবাদের সহিত ! যাদের সাহায্য ছাড়া এই সংখ্যা বের করা যেতো না ।  অসংখ্য ধন্যবাদ ।







4 comments:

  1. purono sur theke notun ek gaan toiri, saare-aam... oshadharon

    ReplyDelete
  2. purono sur theke notun ek gaan toiri, saare-aam... oshadharon

    ReplyDelete
  3. ছবির মত স্থির কথাগুলি ...কষ্ট মাখানো কালিতে !

    ReplyDelete

Facebook Comments