সৌরাংশু

 

নিভৃতে অযতনে

সৌরাংশু



"কবিরা একলা হয়
একলাই ঘর করে
বিষাদ সঙ্গ বড় প্রিয়
কবিদের চলাচল
যাপন- জীবনকাল
শেষ হলে, স্মৃতিটুকু নিও"


কথাটা এভাবে নয়। এভাবে ঠিক বলা যায় না। আজ সে নেই বলে তার কবিতার শবব্যবচ্ছেদে বসে ভাল মন্দ রূহ আগুন আনন্দ দুঃখ চেতনা অবচেতনা নিয়ে আবিষ্কারের নেশায় মাতলে তবেই নিজেরই পিঠ চাপড়ানি থেকে যায়। হাল খাতার বাঁদিকে কিচ্ছুটি ওঠে না ।

দীপঙ্কর দত্তের সঙ্গে আমার বাক্তিগত পরিচয় ছিল, ঘনিষ্ঠতা নয়। তার কবিতার সঙ্গেও । এমনকি তার ফেলে যাওয়া বোতাম টেপা ফোন বা ছোট্ট ফোনডাইরিতেও আমার নাম ছিল না । বইঠক বইমেলায় দেখা সাক্ষাতে আলাপনের অবগাহন আর মাঝে মাঝে শূন্যকালের চাবুকে পিঠ সেঁকে নেওয়া। এই হল দীপঙ্করদার সঙ্গে আমার পরিচয়।

কবি হিসাবে দীপঙ্কর দত্ত কোন মাপের সেটা সময় ঠিক করে দেবে। তবে আলোচনায় উঠে আসা দীপঙ্করদার কবিতাযাপনের চালচিত্র বলছে তাতে মুখ আঁকা হয়েছে বারবার আর তার থেকেও বেশিবার মুছে ফেলা হয়েছে তাকে। কখনও বা উপলক্ষ্য লক্ষ্যকে ছাপিয়ে গেছে । যেটা বুঝতে পারি কিছু একটা ভেঙ্গে চুরে নতুন করে করার প্রয়াস জারি ছিল। নিজেকে, নিজের কবিসত্ত্বাকে, সামগ্রিক কাব্যিক ও সাহিত্যিক অভিযোজনকে। দিল্লিতে বসে বাংলা সাহিত্যের এই গতিমুখে নিজের অস্তিত্বকে বারবার খুঁজেছেন, শিকড় ডুবিয়ে দিতে চেয়েছেন বাংলা কবিতার মাটিতে ।  কিন্তু সেই সময় এও মনে হয় যে কেন জানি অকালেই ঝরে গেলেন এমন সাহিত্য প্রতিভা । আরো কিছু রয়ে গেলো করার, আরো জিজ্ঞাসা বাড়িয়ে তুললো । আগামীর কাছে রেখে গেলো তার অসমাপ্ত কাজ ।

তবে দীপঙ্কর দত্তকে বাংলা সাহিত্য জগত, বিশেষতঃ কবিতা জগত অনেক বেশি করে মনে রাখবে তার ম্যাগাজিন ZERO HOUR বা ওয়েবজিন শূন্যকালের জন্য। বাহ্যিক জীবনের অগোছালো ভাব বা ভিতরের কোথাও থিতু হতে না পারার যন্ত্রণা যেন ওয়েবজিনের হাতে হেসে চুপটি করে বসে যেত।

বাংলা সংস্কৃতির কেন্দ্রমুখ থেকে এতদূর বসে এক কবি সাহিত্যচর্চার ফাঁকে টুপ করে ঝরে গেলেন, এতে হয়তো জগত সংসারের কোন বিশেষ ক্ষতি হল না। তবু দীপঙ্কর দত্তের চলে যাওয়া সমগ্র দিল্লির বাংলা সাহিত্য জগতে এক অপূরণীয় অভিঘাত রেখে গেল। যাঁরা ভরকেন্দ্রের নিকটে চলাফেরা করেন তারা বুঝবেন না যে প্রতিনিয়ত জাঠ পাঞ্জাবী অধ্যুষিত এই পোড়া দেশে বসে সুললিত ভাষাকে বিষনিমজ্জন থেকে বাঁচিয়ে নিজের আত্মাকে বাঁচিয়ে নিয়ে চলা কতটা শক্ত!

আশা করব তার ফেলে যাওয়া পথে কেউ একজন বা একাধিক জন ব্যাটন তুলে নিয়ে নিয়ে মোমবাতি জ্বালাবার কাজ করে যাবে। যা বাংলা কবিতাকে যোজনগন্ধা করে তুলবে।

1 comment:

  1. Por por dudiner modhye dui bangali kobir mrityu songbad pelam. Khub dukkhojonok! Tor shoddhajyapon mon chhunlo.

    ReplyDelete

Facebook Comments