কোলাজ
তুষ্টি ভট্টাচার্য
দীপঙ্কর দত্তকে আমি ব্যক্তিগত ভাবে চিনি নি কোনদিন। ওঁর লেখা কবিতাও খুব একটা পড়ি নি। সত্যি বলতে কি, যেটুকু পড়েছি, দুর্বোধ্য লেগেছিল। বরং ওঁর শূন্যকালের কাজগুলো দেখতাম মন দিয়ে। কী অসম্ভব নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করতেন, অথচ মুখে তার জন্য বাড়তি আওয়াজ করতে দেখি নি। তাঁর কাজই ছিল তাঁর পরিচয়। ওঁর সম্বন্ধে লিখতে গিয়ে ওঁর বেশ কিছু কবিতা পড়ে ফেললাম। আর চমকে গেলাম! আর দুর্বোধ্য লাগছে না তো, বরং একটা স্পার্ক ছোটাছুটি করছে রক্তে। তাই ওঁর লেখা কবিতার লাইন তুলে জুড়ে নিয়ে বানালাম একটা কোলাজ। জানি না, কিছু হল কিনা... কিছু হোক আর না হোক, এটুকুই আমার শ্রদ্ধার্ঘ্য রইল ওঁর প্রতি। আপনি ভালো থাকুন দীপঙ্করদা ।
দরোজা বলে কিছু নেই। বাইরে লাউঞ্জে আজ বৈকালিক ওয়াঃ তাজ ওসব ঝুগ্গী ঝুপড়ির কথা ছাড়ো বরং ওই দুই ধর্ষিতা নান... প্রি-ক্যাম্ব্রিয়ান পৃথিবীর রাত নরক জ্যোৎস্না ঢেকেছে জ্যাবড়া জ্যাবড়া ঘোর পিঙ্গল মেঘ তবু পাথর ও রাত্রির এই ডিউরিপ্যাট্রিক লুতাশ্লেষ্মার ঘুম লুঠেল জিভে দিগ্ধা গান গায়
লোফালুফি খেলতে খেলতে একটি গোলক ছিটকে বরফের ওপর দিয়ে বরফ গিলতে গিলতে স্ফীতকায় কুত্তায় টানা স্লেজে মাদারী ছুটেছে পিছনে, জানি একতু বাড়াবাড়ি হচ্ছে, কিন্তু স্যার, উস্কানিটা আমাই এভাবেই দেই এবং দেবো কারণ আঘাৎ বলতে বুঝি Death blow, Coup de grace.
ধাতব নৈঃশব্দের ভার্টিগ্রো, নিউর্যালজিয়া নিয়ে এখন মেশিনরুম থেকে পথে—তোমার বমি ও ঝড়ের টেক্সট্ ও গ্র্যাফিক্সগুলো যদি মড়কের মত নগরে বন্দরে কোঁকে অন্ডে সবুট লাথির মায়ায় “অপাচ্য হাড়-গোড়-পাথর--- যা কিছু উঠে আসে গিলে ফ্যাল্ ফের – ওয়াক তুলবি ক্যানো, ক্রীতদাস ওয়াক তোলে না...!” এখানে বসন্ত আজ; দু’স্তন ওপচানো দুধে নার্সের অ্যাপ্রন ভিজে গ্যাছে-
ন্যক্কার স্বপ্নের ভেতরে যেভাবে জাগি উঠি ক্যাটস্ প নখরের তীব্য গোধুল দ্যুতি যা অসহনীয় উঠে আসে টার ট্যানিন তিক্ততা—টেনে থুক ফেলি থুঃ প্রতি জালে স্প্যাসটিক মাকড় বাচ্চার থরোথরো যেভাবে অনাটনে ধাতু চিবিয়ে খেয়েছি আবাঁট নিমজ্জনে জৈব তাপ এই ঘুলিয়ে উঠছে ওহ্ কাম অন য়ু বীচ প্রিয়তমা যে শাবক কামনায় এই শিশ্ন এই প্রবেশ করেছে তার তরে কনিক্যাল আগুন ওঠে ওই ধুসর দর্পণে---
কখন প্রহরী বদল হয় জানিনা, সমস্ত রাত শুধু করিডরে একটানা ভারী বুটের আহট্ অসহ্য ওফ্ বেহায়া কপাটগুলি ফিরে আসে ফের—কয়েক পা সজোরে এসে আমি সজোরে ছুঁড়ে দিয়েছি জ্যাভলিন, যেখানে দৌড় শেষ, এইসব বায়বী ছেনালী, রাত্রির সশস্ত্র প্রহরা— প্রতিক্ষিপ্ত ধুল বাতাসের টানে কাশি ওঠে নৃমুন্ড বিগ্রহ ঘিরে বেশ্যা বালিকা টক রুটির কোয়েসিয়া যে আকাশ ব্যাপ্ত করেছে এঁটো পাঞ্জার ছায়া চোষা চাবানো হাড় হাড্ডির বিষণ্ণ স্তুপটুকু মুঠো করে ভাঙা চতুষ্পাঠী জুড়ে আমি একাকী পিশাচ অঘ্রাণ বিষিয়ে ফসলের নব ইস্থেটিক এনেছি—
ঘুম আসে জুম করে দ্যাখো রক্তে টক্সিন আঁজলায় ফ্লিন্ট্স্ মারমার রাম মেমারী মতো মুহূর্তকাল তারপর স্রোত উদ্বেল এসে নিয়ে যায় দুর্গম রাত্রি রৌদ্র কবলিত ক্ষীণ দগ্ধাবশেষ—শোনো শীতরাত্রি ক্রমে ঘন হয়ে ওঠে ধ্বংস ক্যাকোসোমিয়াম পাশে আজ মধ্যরাত নিঃস্বপ্ন শুধু এই রোল শিশু দেবশিশু ট্রালা লালা জুম জুম ইয়ুন হোয় হোয় – ওপার স্তব্ধ জনহীন বেনেডিক্ট্স্ সিনড্রোম এই তীরে সিলিকার স্তর থেকে উঠে আসে খুব চুপিসারে উঠি আততায়ী বিকেন্দ্রিক ঝড়ের দেবীরা নিঃসৃত যোনি জল জলজ স্বপ্নের রাত যা সুরার পরিবর্তে ঢালি গেলাসে গেলাসে ঘনিয়ে উঠেছে বালুকার ক্ষণ বন্দরগাহ্---
এই গান আর নাচ আর প্রেম আর কাম আর মদ ফের মদ আর মদ নোখের ফোকর দিয়ে ভেষজ অ্যাকসেন্ট স্নায়ু স্থির গাছালির ফাৎনা নড়ো যে হও সে হও শালা ঝাঁজরা করে দোবো--- ক্রাচে কখনো স্টেপেজ গেট-এ তৈমুর আগুনের ছুঁচকাজ তুষ তলে ওঃ জীও হে আগুন সেলুলার প্রেম এন্তার ভিক্ষুরা একে অপরের দিক গতিপথ ---
তন্দুর হল্কার দিকে প্যাসেজ যত বেঁকে যায় আমার বুট আহটে তত জান লাত্থাও দরজা ভেঙে পড়ে বাঁদিরা ভাগো জিপ খুলি হারেমের স্পীকারে স্পীকারে শঙ্কা
হ্যাজাক থেকে রোদ্দুর স্লিপ অব টাং ঠিকরে এসেছে দুই শুন্যকে মডেমে গেরো ঠুসে হেঁইও লাবডুব চিমনি কামড়ে ভুসো ছেঁকে ফ্যালে প্রতিটি অচ্ছদ---
খিদেয় ঘাস আগাছা গিলে এখন টোকো সবুজ হড়হড়ে বমি মাছিও ছোঁয় না শুধু রৌদ্রের এককোষী বাঁজা প্রহরগুলি আজ রাতে মা হয় মুখের মাংস পচে খসে হাড় স্রেফ শ্লা শনাক্ত পারিনা বসে থাকি ইডিয়ট গান্ডু বুরবক--- ঠান্ডা কাদার ভেতরে শুয়ে আছি কাদার চিড়বিড় ডেলিরিয়াম শিরায় নক্সী জ্বর স্টেরিল ধূল ঢেলার ওপরে ড্রামের স্টিক তরল ত্রিশ লাখ বচ্ছর পর বৃষ্টি রোমপথে চুঁইয়ে নামছে ইয়েস ডক্টর ইৎস আ কেস অব সীভিয়ার অ্যান্টেপারটাম হেমরেজ ডিয়ু টু প্ল্যাসেন্টা প্রীভিয়া ছঘন্টার ব্লাড ট্রান্সফিউশন আর ড্রিপ অক্সিটোসিন মৃত বাচ্চাটির ওজন প্রায় ছয় পাউন্ড ইয়েস দুধ টানছে—
যতবার বোঝাতে চেয়েছি যে আপৎকালে ওসব মায়া-ফায়া দ্বিধা ঢ্যামনামো ছেড়ে দিয়ে যা ভাঙার তা দ্রুত ভেঙে ফেলতে হয় কাঁচের একেকটি বন্ধ খুপরীর ভেতরে অ্যালার্ম লিফটের বোতাম, ট্যাপ আর ক্যাম্বিসের গোটানো মাইলটাক পাইপ শাবলের পিছন দিকটা দিয়ে ঠিস্ ঠিস্ ঠিন্ শব্দে ভাঙো আঙুলগুলো খসে গ্যাছে ফলে রীড লাফিয়ে উঠে এখন সুর বন্ধ হাড়ের রীড আর হাড়ের নিয়ামক শুধু আগুন সুর হয়ে শ্রাব্য হয়ে ওঠে -
একেকটা রাত আসে ঝড়ের লাগাতার দমকা কবাটগুলো বেকবজা ছিটকে যায় অথচ জল জল নিরুদ্বেগ জলে আগুন লেগে আগ্নেয় ঢেউয়ের সঁচ নক্সার কাঁথা মুড়ে নি শিশুকে সরে দাঁড়া প্রায় দশ ফুট এই উচ্চতা চুম্বকীয় আবেশ শেষ হয়ে গেলে পিষ্টন আচমকা নেবে এসে থেঁৎলে দিতে পারে যেহেতু টানা জল বা স্থল কিছুই ভালো লাগেনা পৃথিবী খানিক জল খানিক টিপলি আইল্যান্ড এভাবে খন্ডিত জ্যাবড়া জ্যাবড়া হয়ে যাক্ পায়ে পায়ে জাহাজ আমার জাহাজ আমার জাহাজ এলো রে
মেঘের ভাঙন ঝরোকায় নেমে আসে আইভি গুল্মে আর শস্যে আমাদের প্রতিটা মায়াবী গোলাঘরে ফিরে আসে মারী জায়ফল কুড়োতে কুড়োতে দীর্ঘ তীর বরাবর আরও নুব্জ হয়ে আসেন পিতামহ সেখানে সায়ং সূর্যে, দাঁড়ের হাসান হুসেন বাইচ এসে তছনছ রাখে আমাদের ডোগাপাতার ঘর ঢেউয়ে ঢেউয়ে শরীর থেকে গলে খসে যায় এঁটেল প্রেম ছোঁকছোঁক হাভাতে আগুন থেকে বেদ আগলে রাখি এক ভীষণ কোরাসে –
কুয়াশার ডাবিং-এ ভোর ফাটছে আর হাওয়ার চাবুক উছলে উঠছে হিলহিলে রেল জ্যা কুয়াশা থিতিয়ে গেলে সুৎরা নিকোনো পথ ফের রৌদ্রের চাদর আর ভল্লের জানলেবা খেল চালি, সমারসল্ট চতুর ম্যাটাডর – লেস বয়নের এমন নেশায় পড়েছি কুরুশের ক্ষিপ্র ঘরবার কল্কা গুলিয়ে যাচ্ছে পেলভিস ফেড়ে ফেড়ে দ্যাখাই ভিসেরা প্রতিটা ভিসকাস উড়ছে আর গান চতুর্দোলা চাকুর ব্লেড বেলোজ ঢেউয়াচ্ছে ঢেউয়ে যাচ্ছে দশরীড চাপের গোঙানি –
পিঁপড়েরা থোক থোক মুখে ডিম তোর ফাটলে সেঁধিয়ে যাবার প্রায় আঠেরো ঘন্টা পর এই বৃষ্টি কাদায় বিজবিজ ছড়িয়ে পড়ছে পিঁপড়ের ঝাঁক আর জমাট বাঁধছে ডিমগুলি ভাসতে ভাসতে নেবে আসে লোড হয় তাবুদ-এর থার্টি-টু বোর এক রাতের প্রেক্ষায় - কার চুল প্রিজমের লোহিত ব্যাপ্তিতে পার ভেঙে ভেঙে এই মেঘ আর হ্যাওৎ হ্যাওৎ বমির শব্দ টানা কিছুই দেখছি না টরনেডো ঘনিয়ে উঠছে সমস্ত মেশিন অফ্ আমাদের বয়ন করে এক ঘূর্ণি শাটল মাকুতে –
এক্সকিউজ মি একটা লাশ বয়ে এনেছিলাম একবার যদি এসে দ্যাখেন!
এক্সকিউজ মি একটা লাশ নিয়ে এসেছিলাম, কার যদি একটু দ্যাখেন!
এক্সকিউজ মি একটা লাশ জাস্ট দু মিনিট সময় চাইছি......
রিগর মর্টিস সেট-ইন করছে একটা লাশ বাঞ্চোৎ কার এসে একবার দ্যাখ!
চন্দাবেনের কোয়ার্টার থেকে টানতে টানতে এই অব্দি পিঠ বেঁকে গ্যাছে, কমসেকম নিজের লাশটার দিকে একবার তো তাকান!
কিচ্ছু বলার নেই। শুধুই স্যালুট।
ReplyDeleteদীপঙ্কর দত্তর জন্য
ReplyDelete