রাজর্ষি চট্টোপাধ্যায়

 

শেষের কবিতা

(উতসর্গ : দীপঙ্কর দত্ত)


রাজর্ষি চট্টোপাধ্যায়


অত:পর ঘড়ি থেকে কাঁটাগুলো টেনে খুলে দিই
কফি নিই, সিগ্রেট ধরাই
গোল গোল ধোঁয়া ছুঁড়ে দিই কড়িকাঠে
প্রথম যে রোদ ঢোকে গাঢ় লাল পর্দার ভেতর দিয়ে বসার ঘরে
তাকে ভাবি সারাদিন অনুসরণ করে যাবো
এভাবে বসার ঘর, রান্নাঘর, পড়ার ঘর, বারান্দা, শোওয়ার ঘর
তারপর স্নানঘর পেরোবে যে ক' ছটাক আলো
আমি তাকে চিনে নেবো লঘু গুরু জ্ঞানে

আপাতত একটা পাখোয়াজ বাজুক
কে বলে দেবে কোন রাগের সাথে বাজছে? ভৈরব?
কী যায় আসে
এতোদিনে যে কান সামান্য তৈরী হয়েছে
ধ্বনিস্ফূট
এতোদিনে যে চোখ তৈরি হয়েছে
দৃশ্যস্ফূট
সব অন্তর্গত ছিঁড়ে খুঁড়ে নিচ্ছে
যা বাজছে তা ঘূর্ণায়মান চরাচর
যা দেখাচ্ছে তা বিশ্বরূপ
তোমার অস্তির থেকেও তোমার নাস্তি বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে

রান্নাঘর থেকে প্রেসার কুকার বাঁশি দিয়ে উঠলো
আমি দেখলাম আলো ধরে গেছে আগুনে
আমার যে খণ্ড সেদ্ধ হচ্ছে তার সুঘ্রাণে ভরে গেছে চারপাশ
আমি টের পাচ্ছি মণিপদ্ম থেকে তিনি বেরিয়ে এসেছেন
হেঁটে যাচ্ছেন আমার পড়ার ঘরে
তাক থেকে ফেলে দিচ্ছেন সমস্ত বই
অথবা বই থেকে সমস্ত তাক
আলো ঘুরে যাচ্ছে নীল ডোরাকাটা বারান্দায়
যেখানে রেণু ধরছে ভোমরা
তার পায়ে আনন্দের অতিশব্দে রতিশব্দে
চন্দ্রমল্লিকার নাভিতে নথ ফুটে উঠছে

তাহলে কে যাবে বলো বারান্দা পেরিয়ে শোওয়ার ঘরে
আলো ও শব্দের মধ্যবর্তী কোন দ্রুতি
যে অংশত আমাকে কুরেকুরে খাবে
আর খাওয়াবে অন্তের সঙ্গে এক অনন্তের যোগফল
দেখবে কে এসে ফেলে গেছে দুপাটি পায়ের ছাপ
তারপর মিলিয়ে গেছে স্নানঘরে
অথচ আমার আঙ্গিনায় কোন উত্সব নেই
আসলে আমার কোন ঘরই নেই
তবু দরজা আঁকতে ভালো লাগে, জানলা

পাখোয়াজটা বেজেই যাচ্ছে
হতে পারে এখন রাগ বৈরাগী
আলো পড়ে এলো
হতে পারে আরো একটা এরকমই দিন
ক্যালেন্ডার থেকে লাফিয়ে নামার আগে
কবন্ধ আমিই কড়িকাঠে উঠে যাবো

আর নামবো না

No comments:

Post a Comment

Facebook Comments